সুন্দর 3টি অনুপ্রেরণামূলক গল্প যা আমাদের জীবন বদলে দিতে পারে

সুন্দর 3 টি অনুপ্রেরণামূলক গল্প যা আমাদের জীবন বদলে দিতে পারে
চিত্র সৌজন্য

শিক্ষনীয় ও অনুপ্রেরণামূলক গল্প যা আপনার মনকে ভালো করতে সাহায্য করবে। নিজেকে আরও আত্মবিশ্বাসী করতে হলে শিক্ষনীয় মোটিভেশনাল গল্পের জুড়ি মেলা ভার। মোটিভেশনাল গল্পই আপনার মনকে শক্তিশালী ও চাঙ্গা করতে পারে। আজকে আপনাদের ৩ টি ছোট অনুপ্রেরণামূলক গল্প শেয়ার করবো। আশাকরি, এই গল্পগুলি আপনাদের আরও আত্মবিশ্বাসী হতে সাহায্য করবে। মন ভালো করার জন্য ছোট গল্প বেশ কাজের । গল্পই মানুষের জীবন পরিবর্তনে বড় ভূমিকা রাখে। আশা করি এই গল্প গুলো শুনতে খুব ভালো লাগবে আপনাদের।

স্বপ্ন পূরণ – A motivational story in Bengali

স্বপ্ন পূরণ

‘স্বপ্ন পূরণ’ গল্প – যখন স্বপ্ন নিজে নিজেই সত্যি হয়ে যায়

একটি ছোট ছেলে অনাথ আশ্রমে বেড়ে উঠছিলো। তার স্বপ্ন ছিলো সে একদিন পাখির মতো উড়তে পারবে। সে বুঝতে পারতো না যে কেন সে উড়তে পারে না। চিড়িয়াখানায় বড় বড় পাখিদেরকেও সে খাঁচার ভেতর উড়তে দেখেছে। সে মনে মনে ভাবতো আমি কেন পারি না? আমার কি তাহলে কোনো সমস্যা আছে?

আরেকটি ছোট ছেলে ছিলো,যে পায়ের সমস্যার জন্যে ঠিক মতো হাঁটতে পারতো না। সে স্বপ্ন দেখতো তার বয়সের অন্য ছেলে-মেয়েদের মতো সেও হাটতে পারছে। দৌড়ে বেড়াচ্ছে। সে ভাবতো,আমি কেন ওদের মতো নই?

একদিন সেই অনাথ ছেলেটি, যে পাখি হতে চাইতো, সে হাঁটতে হাঁটতে সমুদ্র সৈকতে এসে পড়লো। সেখানে সে দেখলো যে পঙ্গু ছেলেটি বালিতে বসে খেলছে। বালি দিয়ে বাড়ি-ঘর বানাচ্ছে। পাখি বানাচ্ছে।

তাকে পাখি বানাতে দেখে সে তার কাছে গিয়ে জিজ্ঞেস করলো,

-তুমিও কি পাখির মত আকাশে উড়ার স্বপ্ন দেখো?

-না। কিন্তু আমি আর সবার মতো হাঁটতে পারার স্বপ্ন দেখি, দৌড়ে গিয়ে বাবার কোলে ওঠার স্বপ্ন দেখি।

তার কথা শুনে ছেলেটি খুব কষ্ট পেল। সে বললো -আমরা কি বন্ধু হতে পারি?

-অবশ্যই আমরা বন্ধু হতে পারি।

এরপর তারা দুইজন মিলে প্রায় অনেক ক্ষণ খেলল । তারা সৈকতের বালি দিয়ে ঘর বানালো, পাখি বানালো, দুজন মিলে নানান রকম শব্দ করছিল । এক সময় পঙ্গু ছেলেটির বাবা হুইল চেয়ার নিয়ে ছেলেটিকে নিতে এলো। যে ছেলেটি পাখির মত উড়তে চাইতো সে পঙ্গু ছেলেটির বাবার কানে কানে কিছু একটা বললো। উত্তরে তিনি বললেন

-ঠিক আছে। আমার কোনো আপত্তি নেই।

ছেলেটি তখন তার পঙ্গু বন্ধুকে বললো,

-তুমি আমার একমাত্র বন্ধু। আমি যদি কিছু করতে পারতাম যাতে তুমি আর সবার মতো হাঁটতে আর দৌড়াতে পারতে তাহলে আমি খুব খুশি হতাম। কিন্তু আমি তো তা পারি না। তবু আমি কিছু একটা করতে চাই।

এই বলে সে ঘুরে দাড়ালো এবং তার বন্ধুকে বললো তার পিঠে উঠে বসতে। সে উঠে বসলে ছেলেটি বালুর উপর দিয়ে ধীরে ধীরে দৌড়াতে শুরু করলো। দৌড়াতেই থাকলো। দৌড়ের গতি বাড়লে তাদের দুজনের মুখে সমুদ্রের বাতাস এসে ধাক্কা দিতে লাগলো।

দূর থেকে এই দৃশ্য দেখে তার বাবা চোখের জল আটকে রাখতে পারলো না। পঙ্গু ছেলেটি খুশিতে তার দু হাত দুদিকে মেলে ঠিক একটি পাখির মতো উপরে নিচে করতে লাগলো এবং চিৎকার করে বলতে লাগলো

আমি উড়ছি, বাবা, আমি উড়ছি!”

শিক্ষাঃ অন্যের স্বপ্ন পূরণ করুন, আপনার স্বপ্ন নিজে নিজেই সত্যি হয়ে যাবে।

আরও পড়ুন: ছোটদের জন্য 5 টি অসাধারণ নীতি শিক্ষামূলক গল্প

দৃষ্টিভঙ্গি

দৃষ্টিভঙ্গি

‘দৃষ্টিভঙ্গি’ গল্প – কাদা না খুজে আকাশের তারা খোঁজার চেষ্টা করুন

একবার এক নববিবাহিতা স্ত্রীকে বিয়ের পর পরই তার স্বামীর সাথে চলে যেতে হয়েছিল ক্যালিফোর্নিয়ার মরুভূমি অঞ্চলে। যেহেতু সে শহরে বেড়ে উঠেছিল তাই মরুভূমি তার কাছে অত্যন্ত প্রত্যন্ত, গেঁয়ো এবং নিরানন্দ লাগছিল। তাদের যেখানে থাকার ব্যবস্থা হল সেটা তার কাছে মোটেও সহজ হলো না । গ্রামের জীর্ন একটা চালা ঘর, ধূসর মরুভূমি, আদিবাসী প্রতিবেশি। স্বভাবতই কেউই আদিবাসী ভাষা ছাড়া অন্য কোন ভাষায় কথা বলতে পারে না। প্রচন্ড গরমের মধ্যে অসহায় একাকিত্ব সময় পার করতে লাগল।

এর মধ্যে যখন তার স্বামী কাজের প্রয়োজনে কিছু দিনের জন্য দূরে চলে গেল। তখন সে তার মাকে লিখে পাঠাল যে, এখানে এই অদ্ভুত মানুষ আর তাদের সংস্কৃতির সাথে মিলে চলতে পারছে না। তাই সে বাড়ি ফিরে আসছে। কয়েক দিন পরে তার মায়ের কাছ থেকে উত্তর এল । সেটাতে লেখাছিল :-

“দুই জন লোক কারাগারের ফটক দিয়ে বাহিরে তাকাল
একজন দেখতে পেল কাদা আর অন্যজন আকাশের তারা ”

ব্যাস, এই কয়েকটা শব্দতেই তার অন্তরদৃষ্টি খুলে গেল। এবার সে আর পরিবেশকে নয় বরং নিজেকে বদলানোর চেষ্টা করল। আদিবাসী প্রতিবেশীদের সাথে বন্ধুসুলভ আচরন শুরু করলো। আপন মনে মরুভুমির সৌন্দর্য্ আবিষ্কার করার চেষ্টা করল। তার পৃথিবী বদলে গেল। অল্প সময়েই তার কাছে ঐ জায়গা মনে হল এক নতুন জগৎ এক নতুন পৃথিবী। এক নতুন আনন্দলোক ।

শিক্ষাঃ সময়ের প্রয়োজনে একটু ভালো থাকার আশায় নিজেকে বদলে নিন, উপযোগী করে তুলুন পরিবেশের সাথে।

কালো বিন্দু – একটি অনুপ্রেরণামূলক গল্প

অনুপ্রেরণামূলক গল্প - কালো বিন্দু

কালো বিন্দু’ গল্প – আমাদের দৃষ্টিভঙ্গিকে যদি আরও বিস্তৃত করতে পারি তবে পটভূমির কালো বিন্দুরা ক্ষুদ্রতর হয়ে যায়।

একটি স্কুলের পরিদর্শন চলা অবস্থায়, স্কুলের প্রধান পরিদর্শককে শেষ-বর্ষের ছাত্রদের সামনে কিছু অনুপ্রেরণা মুলক কথা বলার জন্য অনুরোধ করেন।

পরিদর্শক ছাত্রদের উদ্দেশ্য একটি সাদা কাগজ দেখান এবং বল পয়েন্ট দিয়ে কাগজের মাঝে একটি বিন্দু দেন। অতপর ছাত্রদের জিজ্ঞাসা করেন- “এখানে তোমরা কি দেখতে পাচ্ছ?”

সামনের সারির একজন দাড়িয়ে জবাব দেয়- “একটি কাল বিন্দু দেখতে পাচ্ছি”

পরিদর্শক আবার সকলের দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞাসা করেন- “আর কেউ কি কিছু দেখতে পাচ্ছ?”
সকলে সমস্বরে উত্তর দেয়- “কালো বিন্দু”

পরিদর্শক তখন কাগজটি ভাঁজ করে পকেটে রেখে দিয়ে জিজ্ঞাসা করলেন:-
“তোমরা কি এই সম্পূর্ণ সাদা পৃষ্ঠাটি দেখতে পাচ্ছ? আমাদের জীবনে এমন অনেক ঘটনা ঘটে যা খুব সাফল্যমণ্ডিত আর আনন্দদায়ক এবং খুব রোমাঞ্চকর-ঠিক এই সাদা পৃষ্ঠার মত, আবার এমন অনেক ভুল আর ব্যর্থতা আসে যা আমদের চলার পথকে থমকে দেয়, ঠিক এই কালো বিন্দুর মত।”

আমরা যদি আমাদের দৃষ্টিকে আরও বিস্তৃত পটভূমিতে দেখি তাহলে কালো বিন্দুটাকে অত্যন্ত ক্ষুদ্র মনে হবে যাকে খুব সহজেই এড়িয়ে চলতে পারব, নতুবা সঙ্কীর্ণ মনে শুধু কালো বিন্দুটাই নজরে আসবে। ব্যর্থতার মাঝে নিজেকে কেবল হতাশই মনে হবে।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top