রাগের উপর নিয়ন্ত্রন পান

যদি রাগের উপর নিয়ন্ত্রন থাকে তবে জীবনের অর্ধেক সমস্যার সমাধান। তবে রাগ সামলানো সহজ কথা নয়, আর সেটা যদি হয় পরিস্থিতির বিপরীতে তাহলে বেশ মুস্কিল। তাই রাগ কমানোর উপায় জানা থাকা মঙ্গল।

জ্যাম এর মাঝে পড়ে গাড়ির ধোঁয়া গিলছেন? বাচ্চা কথা শুনছেনা বিরক্ত করছে? অফিসে বসের বকা শুনতে হচ্ছে? সকল পরিস্থিতিতেই আমাদের মানিয়ে চলতে হয়। অতিরিক্ত রাগ কিংবা রাগ নিয়ন্ত্রণ না করতে পারাটাও একসময় আপনার জীবনে দুর্গতি বয়ে আনতে পারে।

মানসিক বা শারীরিক উভয় দিক বিবেচনা করেই আমাদের রাগ নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।

আসুন জেনে নেই রাগ কমানোর ১০টি উপায়।

১। বলার আগে ভাবুন

আপনি আমি আমরা সকলেই কথা বলি। বেঁচে থাকতে হলে কথা বলতেই হবে। তবে বলার আগে একটু ভেবে যদি বলা যায় তাহলে হয়ত অনেক ক্ষেত্রেই সুবিধা হয়। এখন প্রশ্ন হলো কিভাবে বুঝবো, কোন কথা বলব, নাকি বলব না?

আসলে বলা যাবে কি যাবে না? ঠিক হবে কি হবে না এইগুলো কথা বলার পরেই বোঝা যায়। কথা বলার আগে বোঝার কোন উপায় নেই।

প্রধান চর্চা হলো কথা বলার আগে একটু বিবেচনা করে নেয়া।

ক্ষণিক বিবেচনা আপনার চিন্তা একটু হলেও নমনীয় করে একটু নরম শব্দ ডেলিভারী দিতে পারে। রাগ কমানোর উপায় হিসেবে এই টিপস অন্যতম।

২। রাগ থেমে গেলে নিজের রাগ বিশ্লেষণ করুন

ধরুন ২ জন বন্ধু মিলে অনেক ঝগড়া করলেন। রাগ থেমে গেলে নিজের রাগ টার কারন চিন্তা করুন এবং বন্ধুর সাথে শেয়ার করুন।

তবে অবশ্যই বন্ধুর রাগ কমে গেলে তারপর নাহলে রাগ বিশ্লেষণ করতে গিয়ে আবার ঝগড়া লেগে যেতে পারে।

৩। শারীরিক কসরত

রাগ থামছেই না? আপনার বুঝতে বাকি নেই খুব খারাপ কিছু হতে যাচ্ছে? বাইরে বের হয়ে একটু হেটে আসুন।

নির্মল বাতাস, আশেপাশের অনেক কিছু আপনার মন কে অন্য লেভেল এ নিয়ে যেতে পারে। নিমেষেই ভূলে যেতে পারেন প্রবল রাগ।

৪। কিছু সময় নিজের জন্যে

সারাদিন পরিশ্রমের পর নিজের জন্য কিছু সময় রাখুন। নিরিবিলি কিছু সময়ের চিন্তা আপনার মস্তিষ্ককে দিতে পারে অনেকটা প্রাণ।

এটা করতে পারেন কাজের শেষে অফিসে বসেই অথবা বাসায় ফিরে আপনার প্রিয় রুমের কোনে বসে।

৫। কারন নয় “উপায়” চিহ্নিত করুন

কোন কারনে আপনি রেগে গেলেন সেটা বিবেচনা না করে, কি করলে রাগ কমবে সেটা চিন্তা করাটা শ্রেয়। আপনার সন্তান প্রিয় কাচের গ্লাসটি ভেঙে ফেলেছে? সন্তান কিভাবে করলো সেটা না ভেবে আগে ভাবুন কিভাবে কাঁচের টুকরো গুলো ফ্লোর থেকে সরাবেন? সেই কাঁচের টুকরো আপনার সন্তানের ক্ষতিই করতে পারে সবার আগে।

৬। নিজের ইগো বুঝুন

মানুষ মানেই সকলের ইগো বলতে একটা ব্যাপার থাকে। ইগোর কারনে নিজের দোষ যদি স্বীকার করতে না চান তাহলে রাগ ভীতরে ভীতরে বাড়তে থাকবে। ইগো কে গুলি মারুন। নিজের দোষ থাকলে অকপটে বলে ফেলুন দেখবেন রাগ ধুয়ে পানি হয়ে গেছে।

৭। ভারিক্কি চাল পরিহার করুন

নিজের ভার রাখতে হয় নাহলে চলা দায়। কথায় আছে, হাতী গর্তে পড়লে পিপীলিকাও ভাব মারে। তাই বলে সর্বদা গ্রেভিটি নিয়ে চলা আপনার বিপদ ডেকে আনতে পারে।

স্বার্থ ত্যাগ করা, অল্পতেই ক্ষমা করে দেয়া আপনার চারিত্রিক গুনাবলি যেমন বাড়াবে তেমনি আপনার রাগ ও আয়ত্তে আনবে।

৮। হেসে কৌতুক করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনুন

যখন বুঝতে পারছেন আপনার রাগ আয়ত্তের বাইরে চলে যাচ্ছে, অযথাই হেসে ফেলুন।

দেখবেন আপনার বিপরীতে যিনি আছেন তিনিও যোগ দেবেন হাসিতে। হাসি একটা ভয়ংকর সংক্রামক ব্যাপার। একবার প্রয়োগ করেই দেখুননা!!!

৯। কিছু ঐতিহাসিক প্র্যাক্টিস

অনেক আগে থেকেই শুনে আসছেন হয়তো কিছু আজব কাজ। যেমন, ১০০ থেকে উলটো গোণা, জোরে জোরে নিঃশ্বাস নেয়া, মনে মনে বলা ‘Cool Down, Cool Down’ ‘easy, easy’ ইত্যাদি।

এইগুলো যদি কোন কাজ করেনা বলে মনে করেন তাহলে অন্তত এটা ভাবুন আপনার মন চিন্তা ক্ষণিকের জন্যে হলেও অন্য কিছু নিয়ে বিচলিত ছিলো।

১০। সঙ্গীত শুনুন বা করুন

নিয়মিত সঙ্গীত করা বা শোনা মানসিক দিক দিয়ে আপনাকে নিয়ে যেতে পারে অন্য রকম ভুবনে। সঙ্গীত সর্বদাই মনকে করে কোমল এবং আবেগী যা রাগ অভিমানের বিপরীত।

রাগ নিয়ন্ত্রনে একদিনেই আসেনা। রাগ কমানোর উপায় গুলো দীর্ঘ প্রচেষ্টা এবং নিয়মিত চর্চা আপনার রাগ আয়ত্তে আনতে সহয়তা করবে।

মনে রাখবেন রেগে গেলেন তো হেরে গেলেন। রেগে না গেলে যে আপনি জিতে যাবেন তাও নয়, অন্তত নিজের মনকে বোঝাতে পারবেন হেরে তো যাননি!!!