
বিখ্যাত মনিষীদের ঘিরে সাধারণ মানুষের কৌতূহলের অন্ত নেই, বিশেষত মজার বা হাসির ঘটনা। তাদের ব্যক্তিগত জীবনও সমানভাবে আকর্ষণ সৃষ্টি করে। যদি সেই ব্যক্তিগত জীবনে কোনো মজার বা হাসির ঘটনা ঘটে থাকে, তবে কৌতূহল যেন আকাশ স্পর্শ করে। তেমনই কয়েকজন বিখ্যাত ব্যক্তির ব্যক্তিগত জীবনের কিছু হাসির গল্প এখানে তুলে ধরা হলো। এই মজার কাহিনিগুলো সংগ্রহ করা হয়েছে পৃথিবীর খ্যাতনামা মনিষীদের জীবনকথা থেকে। এই মনিষীদের জীবন যেমন বিস্ময়কর, তেমনই তাদের উক্তি এবং জীবনে ঘটে যাওয়া বিভিন্ন গল্প বা হাসির ঘটনাও বেশ চমৎকার।
নিচে আপনাদের জন্য চয়ন করা 10 টি সুন্দর হাসির ঘটনার উল্লেখ করা হল। আশাকরি ভাল লাগবে।
1. মাতালকে সাহায্য ( Humorous moment by Ishwar Chandra Vidyasagar )

কবি মাইকেল মধুসূদন দত্তের আর্থিক অনটনের সময় ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর মহাশয় ওনাকে আর্থিক সাহায্য করতেন।
একদিন এক মাতাল বিদ্যাসাগর মহাশয়ের কাছে সাহায্য চাইতে এলে বিদ্যাসাগর বললেন, “আমি কোন মাতালকে সাহায্য করি না।”
কিন্তু আপনি যে মধুসুদনকে সাহায্য করেন তিনিও তো মদ খান – মাতালের উত্তর।
তখন বিদ্যাসাগর উত্তর দেন, “ঠিক আছে আমিও তোমাকে মধুসূদনের মত সাহায্য করতে রাজী আছি তবে তুমি তার আগে একটি “মেঘনাদ বধ” কাব্য লিখে আন।”
পড়ে দেখুন: গোপাল ভাঁড়ের 10টি সেরা হাসির গল্প
2. আমার এত টাকা কি আছে? ( Humorous moment by Publo Picasso )

শিল্পী পাবলো পিকাসোর বাসায় একবার এক অতিথি এলেন।
অতিথি বাড়ি ঘুরে ঘুরে লক্ষ করলেন, পুরো বাড়িতে বিচিত্র ধরনের জিনিসপত্র থাকলেও কোথাও পিকাসোর কোনো চিত্রকর্ম নেই।
বেশ অবাক হয়ে তিনি জিজ্ঞেস করলেন, ‘ব্যাপার কী বলুন তো? আপনার বাড়িতে আপনারই কোনো চিত্রকর্ম নেই যে?’
রসিক পিকাসো বললেন, ‘আমার এত টাকা কি আছে যে বাসায় পিকাসোর ছবি রাখব? তাঁর একেকটা ছবির যা দাম!’
3. লেট ট্রেন

অনেক বছর আগের কথা। সে সময় আমেরিকান ট্রেনগুলো বেশ ধীরগতিতে চলত। লেট করত ঘণ্টার পর ঘণ্টা। সকাল ৮টার ট্রেন রাত ৮টায় আসবে কি না সে বিষয়ে সবাই থাকত সন্দিহান।
এমনই এক সময়ে বিখ্যাত রম্যসাহিত্যিক মার্ক টোয়েন একবার কোথাও যাওয়ার জন্য ট্রেনে চেপে বসে ছিলেন।
কিছুক্ষণ পর কামরায় উঠল টিকিট চেকার। মার্ক টোয়েন গম্ভীর মুখে চেকারের দিকে একটা ‘হাফ টিকিট’ বাড়িয়ে দিলেন। বুড়ো মানুষের হাতে ‘হাফ টিকিট’ দেখে টিকিট চেকার অবাক! তাঁর প্রশ্ন, ‘কী মশাই, আপনি হাফ টিকিট কেটেছেন কেন? গোঁফ, মাথার চুল সবই তো সাদা। আপনি কি জানেন না চৌদ্দ বছরের বেশি হলে আর হাফ টিকিট চলে না?’
মার্ক টোয়েনের সোজা জবাব, “যখন ট্রেনে চড়েছিলাম, তখন তো বয়স চৌদ্দই ছিল। কে জানত, ট্রেন গন্তব্যে পৌঁছতে এত লেট করবে!”
পড়ে দেখুন: বাবুর্চির বুদ্ধি – হাততালি দিলে পাতের বকটা উড়ে যেত যে
4. আমাকে দাঁড়িয়ে থাকতে হয় ( Funny moment of Mark Twain )
সাহিত্যিক মার্ক টোয়েন একবার শেভ করতে সেলুনে গেলেন। শেভ করানোর ফাঁকে নাপিতের সঙ্গে আলাপ জুড়ে দিলেন,
‘আপনাদের শহরে এবারই প্রথম বেড়াতে এলাম।’
নাপিত বলল, ‘ভালো সময়ে এসেছেন। আজ রাতে এখানে মার্ক টোয়েন বক্তৃতা দেবেন। সেখানে যাচ্ছেন তো?’ ‘আশা করছি যাব।’ ‘টিকিট কিনেছেন?’
‘না তো!’
‘সম্ভবত আর টিকিট পাবেন না। যদিও পান, তাহলে আপনাকে দাঁড়িয়ে থাকতে হবে।’
‘আমার ভাগ্যটা আসলেই খারাপ। ভদ্রলোক যখনই বক্তৃতা দেন, তখনই আমাকে দাঁড়িয়ে থাকতে হয়!’ টোয়েন বললেন।
5. যদি তুমি শিখে নাও ( A humorous event from life of Bertrand Russell)

‘পৃথিবী সূর্যের চারপাশে ঘুরছে’ সে সম্পর্কে একবার বক্তৃতা করছিলেন বারট্রান্ড রাসেল। বক্তৃতার মাঝখানে এক বৃদ্ধলোক দাঁড়িয়ে রাসেলের কথার প্রতিবাদ করে বললেন, “ওহে তরুণ তুমি বেশ বুদ্ধিমান এতে কারো সন্দেহ নেই। তবে পৃথিবী যে চ্যাপ্টা আর তা কচ্ছপের পিঠে করে বয়ে বেড়াচ্ছে তা মনে করেছ আমরা জানিনা!”
রাসেল বৃদ্ধের কথা শুনে অবাক হলেন। প্রশ্ন করলেন, “ঠিক আছে, তাহলে আপনি এবার বলুন, ওই কচ্ছপটা কিসের ওপর দাঁড়িয়ে আছে?”
বৃদ্ধ একটু ঘাবড়ে গিয়ে বললেন, “হুঁ, আমি তোমাকে বলে দিই আর যদি তুমি শিখে নাও! সেটা হতে দেবনা।”
6. সাদা বেল্ট আর হাতমোজা

লেখক অ্যাডগার অ্যালান পো তাঁর জীবনের বেশ কিছু সময় সামরিক বাহিনীতে কাটিয়েছেন।
একবার পাবলিক প্যারেডে নির্দেশ এল, সাদা বেল্ট আর হাতমোজা পরে আসতে হবে।
পরদিন পো আক্ষরিকভাবে উলঙ্গ হয়ে প্যারেডে যান।
পরনে ছিল কেবল সাদা বেল্ট আর হাতমোজা।
7. দণ্ড – (Humorous event from Tagor’s life)

শান্তিনিকেতনের অধ্যাপক নেপাল রায়কে রবীন্দ্রনাথ একবার লিখে পাঠালেন, “আজকাল আপনি কাজে অত্যন্ত ভুল করছেন। এটা খুবই গর্হিত অপরাধ।
এজন্য কাল বিকেলে আমার এখানে এসে আপনাকে দণ্ড নিতে হবে।”
চিন্তিত, শঙ্কিত নেপালবাবু পরদিন শশব্যস্ত হয়ে কবির কাছে উপস্থিত হলেন। আগের রাতে দুশ্চিন্তায় তিনি ঘুমাতে পারেননি। এখনো তাঁকে বেশ কিছুক্ষণ উৎকণ্ঠার মধ্যেই বসিয়ে রেখেছেন কবিগুরু।
অবশেষে পাশের ঘর থেকে একটি মোটা লাঠি হাতে আবির্ভূত হলেন কবি।
নেপালবাবুর তখন ভয়ে কাণ্ডজ্ঞান লুপ্তপ্রায়।
তিনি ভাবলেন, সত্যি বুঝি লাঠি তাঁর মাথায় পড়বে। কবি সেটি বাড়িয়ে ধরে বললেন, “এই নিন আপনার দণ্ড ! সেদিন যে এখানে ফেলে গেছেন, তা একদম ভুলে গেছেন তো?”
পড়ে দেখুন: সুন্দর অনুপ্রেরণামূলক গল্প যা আমাদের জীবন বদলে দিতে পারে
8. ঘ্যানর ঘ্যানর ( A light moment by Thomas Alva Edison )
টমাস আলভা অ্যাডিসনের গ্রামোফোন আবিষ্কার উপলক্ষে এক সংবর্ধনা সভার আয়োজন করা হয়েছে।
এক তরুণী তাঁর বক্তৃতায় অ্যাডিসনকে অযথাই আক্রমন করে বসল, “কী এক ঘোড়ার ডিমের যন্ত্র আবিষ্কার করেছেন, সারাক্ষণ কানের কাছে ঘ্যানর ঘ্যানর করতেই থাকে। আর তাই নিয়ে এত মাতামাতি! ইতিহাস আপনাকে ক্ষমা করবে না…।”
তরুণী বলেই যাচ্ছে, থামার কোনো লক্ষণ নেই।
অ্যাডিসন চুপ করে শুনে গেলেন। পরে বক্তৃতা দিতে উঠে তিনি বললেন, ‘ম্যাডাম, আপনি ভুল করছেন।
আসলে সারাক্ষণ কানের কাছে ঘ্যানর ঘ্যানর করার যন্ত্র আবিষ্কার করেছেন ঈশ্বর। আমি যেটা আবিষ্কার করেছি সেটি ইচ্ছেমতো থামানো যায়।”
9. চিনির গান ( A light moment by Promothanath Bishi )

মরিস সাহেব ছিলেন শান্তিনিকেতনে ইংরেজি ও ফরাসি ভাষার অধ্যাপক। একা থাকলে তিনি প্রায়ই গুনগুন করে গান গাইতেন। একদিন তিনি তৎকালীন ছাত্র প্রমথনাথ বিশীকে বললেন, জানো গুরুদেব(রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর) চিনির ওপর একটি গান লিখেছেন, গানটি বড়ই মিষ্টি।’ প্রমথনাথ বিশী বিস্মিত হয়ে বললেন, “কোন গানটা? তার আগে বলুন, এই ব্যাখ্যা আপনি কোথায় পেলেন?”
উত্তরে মরিস সাহেব জানালেন, ‘কেন, স্বয়ং গুরুদেবই তো আমাকে এটা বলে দিয়েছেন।’
অতঃপর তিনি গানটি গাইতে লাগলেন, ‘আমি চিনি গো চিনি তোমারে, ওগো বিদেশিনী, তুমি থাকো সিন্ধুপারে…।’ প্রমথনাথ বিশী মুচকি হেসে বললেন,তা গুরুদেব কিন্তু ঠিকই বলেছেন, চিনির গান তো মিষ্টি হবেই”।
10. মাথা ব্যাথার ওষুধ ( Funny moment by George Bernard Shaw )

জর্জ বার্নাড শ প্রায় সত্তর বছর পর্যন্ত মাথা ব্যাথায় ভুগেছিলেন। এ ব্যাপারে শ’ উত্তর মেরুর আবিষ্কারক নানসেন কে জিজ্ঞাসা করেছিলেন: আচ্ছা আপনি মাথা ধরার কোন ঔষধ আবিষ্কার করেছেন কি?
নানসেন তো অবাক। তিনি বিস্ময় প্রকাশ করে বললেন, “না তো!” শ’ তখন বললেন, “কি আশ্চার্য্য! উত্তর মেরু আবিষ্কারের জন্য সারাজীবন কাটালেন! অথচ পৃথিবীর কাছে তার মূল্য দু পয়সাও নয়। আপনি মাথা ধরার কোন ঔষধ আবিষ্কারের চেষ্টাও করেননি; অথচ পৃথিবীর সমগ্র মানুষ এই মহৌষধের জন্য কেঁদে কেটে আকুল”।